পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে প্লাস্টিককে দায়ী করা হয়ে থাকে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে যেমন মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হয়েছে, তেমনি নানা ধরনের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জও দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো প্লাস্টিক দূষণ। সহজলভ্যতা ও স্বল্পমূল্যের কারণে আমরা প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করছি, কিন্তু এর ফলাফল কী ভয়াবহ হতে পারে তা আমরা অনেক সময় চিন্তাও করি না।
প্লাস্টিক: এক ভয়াবহ নিরব ঘাতক
প্লাস্টিক এমন একটি উপাদান যা প্রাকৃতিকভাবে খুব ধীরে ভাঙে বা নষ্ট হয়। একটি প্লাস্টিক ব্যাগ মাটিতে সম্পূর্ণরূপে মিশে যেতে ৪০০ থেকে ১০০০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। এত দীর্ঘ সময় ধরে এটি মাটি ও পানিকে বিষাক্ত করে তোলে। শহর ও গ্রামগঞ্জে রাস্তাঘাটে, ড্রেনে, নদী-নালায় প্লাস্টিকের জমে থাকা আবর্জনা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। প্লাস্টিক ব্যাগ ড্রেনের মুখ বন্ধ করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে, যা জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়ায়।
সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য প্লাস্টিক এক মরণফাঁদ
বিশ্বের সমুদ্রে প্রতি বছর কয়েক মিলিয়ন টন প্লাস্টিক চলে যায়। সামুদ্রিক মাছ, কচ্ছপ, ডলফিনসহ নানা প্রাণী প্লাস্টিককে খাবার ভেবে খেয়ে ফেলে এবং দম বন্ধ হয়ে মারা যায়। এমনকি এসব প্লাস্টিক থেকে উৎপন্ন হওয়া মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের খাদ্য চক্রেও প্রবেশ করছে, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক হুমকি।
মানবদেহে প্লাস্টিকের কুপ্রভাব
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক এখন মানুষের রক্ত, ফুসফুস এমনকি গর্ভস্থ শিশুর শরীরেও পাওয়া যাচ্ছে। প্লাস্টিক থেকে নির্গত বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ক্যানসার, হরমোন জনিত সমস্যা, বন্ধ্যত্ব এবং শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধিতে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে।
প্লাস্টিকের বিকল্প কী?
প্লাস্টিক পণ্যের পরিবর্তে আমরা প্রাকৃতিক ও পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করতে পারি। যেমন:
বাজার করার জন্য পাট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করা
খাবার পরিবেশনের জন্য কাঠ, বাঁশ, মাটি বা কাঁচের পাত্র ব্যবহার করা
পানি পানের জন্য স্টিল বা কাচের বোতল ব্যবহার করা
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক স্ট্র, চামচ, প্লেটের পরিবর্তে পুনঃব্যবহারযোগ্য পণ্য বেছে নেওয়া
সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা জরুরি
প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে শুধু ব্যক্তি নয়, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে একযোগে কাজ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা বাড়াতে হবে। গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার চালাতে হবে। সরকারকে কঠোর আইন প্রয়োগ করে প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে এবং বিকল্প পণ্যের উৎপাদনে উৎসাহ দিতে হবে।
পরিবেশ রক্ষা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। আমরা যদি এখনই সতর্ক না হই, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি বিষাক্ত, বিপন্ন পৃথিবী পাবে। তাই আসুন, এখনই প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার সীমিত করি, পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার করি এবং একটি সবুজ, সুস্থ ও টেকসই পৃথিবী গড়ে তুলি।