# **বাংলাদেশী সিনেমা বরবাদ: শিল্প নাকি শুধু বাণিজ্য?**
বাংলাদেশী সিনেমার অবস্থা আজ শোচনীয়। একসময়ের স্বর্ণযুগের সিনেমা যেমন *জীবন থেকে নেয়া*, *সূর্য দীঘল বাড়ী*, বা *দেবদাস*-এর মতো চলচ্চিত্র যে দেশে তৈরি হয়েছে, আজ সেই বাংলাদেশী সিনেমার বেশিরভাগই নিম্নমানের, অপরিকল্পিত এবং শুধুমাত্র বাণিজ্যিক সাফল্যের দৌড়ে মরিয়া। প্রশ্ন হলো—কেন এই অবনতি? কাদের দায়িত্ব এখানে?
## **গুণগত মানের অভাব**
আজকের বাংলাদেশী সিনেমাগুলোর প্রধান সমস্যা হলো গল্পের অভাব। বেশিরভাগ চলচ্চিত্রেই দেখা যায় একই ফর্মুলা: জোর করে রোমান্স, অপ্রয়োজনীয় একশন, নারী চরিত্রকে শুধুমাত্র "আইটেম" হিসেবে উপস্থাপন, আর হাস্যরসের নামে অশ্লীলতা। গল্পের গভীরতা, চরিত্রের বিকাশ বা সামাজিক বার্তা—এসবির বালাই নেই। পরিচালক ও প্রযোজকরা দর্শককে "অশিক্ষিত" ভেবে এমন সিনেমা বানাচ্ছেন, যা আসলে দর্শকদের রুচিকেই আরও নিচে নামিয়ে দিচ্ছে।
## **প্রযুক্তি ও বাজেটের সীমাবদ্ধতা**
ভারত বা হলিউডের সিনেমার সাথে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে বাংলাদেশী সিনেমায় এখনও প্রযুক্তিগত দিক থেকে পিছিয়ে। VFX, সিনেমাটোগ্রাফি, শব্দের মান—এগুলোতে বিনিয়োগ কম। অথচ বাজেটের অভাব থাকলেও সৃজনশীলতার অভাব নেই। ছোট বাজেটে ভালো সিনেমা তৈরি সম্ভব (যেমন *আয়নাবাজি*, *পূর্ব পশ্চিম*), কিন্তু সেটা করতে হলে গল্প এবং পরিচালনায় মনোযোগ দিতে হবে।
## **পাইরেসি ও ওটিটি-র চ্যালেঞ্জ**
সিনেমা হলের টিকিট বিক্রি এখন আর আগের মতো নয়। পাইরেসি এবং নেটফ্লিক্স, হুলুর মতো ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কারণে দর্শকরা ঘরে বসেই বিশ্বসেরা কন্টেন্ট দেখছে। বাংলাদেশী সিনেমা যদি মানসম্পন্ন না হয়, তাহলে দর্শক কেন সিনেমা হলে গিয়ে টাকা খরচ করবে?
## **সমাধান কী?**
১. **গল্পের উপর জোর**: দর্শককে বোকা ভাবার মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। গভীর, গবেষণাধর্মী এবং বাস্তবসম্মত গল্প প্রয়োজন।
২. **প্রযুক্তির উন্নয়ন**: সিনেমাটোগ্রাফি, এডিটিং, সাউন্ড ডিজাইনে আধুনিক টেকনোলজির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
৩. **নতুন প্রতিভা**: তরুণ ও মেধাবী চলচ্চিত্রকারদের সুযোগ দিতে হবে। স্বল্পবাজেটের ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিনেমাকে উৎসাহিত করতে হবে।
৪. **সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা**: সিনেমাকে শিল্প হিসেবে গণ্য করে ট্যাক্স ছাড়, ফান্ডিং এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়নে সাহায্য করতে হবে।
## **শেষ কথা**
বাংলাদেশী সিনেমা শুধু বাণিজ্য নয়, একটি শিল্প। এই শিল্পকে বাঁচাতে হলে গুণগত মান, সৃজনশীলতা এবং দর্শকের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। নইলে, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সিনেমা শুধুই "নস্টালজিয়া" হয়ে থাকবে, বর্তমানের কোনো উদাহরণ নয়।