মে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা মে দিবস। এটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের স্মৃতিতে উৎসর্গকৃত একটি দিন, যার সূচনা হয়েছিল ১৮৮৬ সালের যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে এক রক্তাক্ত আন্দোলনের মাধ্যমে।
ইতিহাসের পটভূমি
১৯ শতকের শেষ দিকে শিল্প বিপ্লবের পর শ্রমিকরা দিনে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করতেন। ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং বিশ্রামের কোনও সুযোগ ছিল না। এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল শ্রমিক শ্রেণি। ১৮৮৬ সালের ১ মে, আমেরিকার শিকাগো শহরে হাজারো শ্রমিক ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন শ্রমিক নিহত হন, যা ইতিহাসে “হে মার্কেট ম্যাসাকার” নামে পরিচিত। এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং শ্রমিকদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে ১লা মে 'আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস' হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে শ্রমিক দিবস প্রথম পালিত হয় ১৯৬০ সালে। স্বাধীনতার পর এই দিবসটি সরকারিভাবে ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ দিনটিতে শ্রমিক সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচির মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার ও দাবিদাওয়ার কথা তুলে ধরে। শিল্প এলাকা, পোশাক কারখানা, নির্মাণ ও পরিবহন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন আজও আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
দিবসটির তাৎপর্য
শ্রমিক দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, শ্রমিক ছাড়া কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র উন্নতির পথে এগোতে পারে না। তাদের কাজ, ঘাম ও ত্যাগেই গড়ে ওঠে রাস্তা, বিল্ডিং, পোশাক, পরিবহন ও শিল্প প্রতিষ্ঠান। তাই শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা, ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব।
আমাদের করণীয়
শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা
শিল্পক্ষেত্রে শ্রম আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা
শিশু শ্রম বন্ধ ও নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করা
শ্রমিক দিবস শুধু একটি ছুটির দিন নয়; এটি এক চেতনার দিন, সংগ্রামের দিন, অধিকার আদায়ের দিন। আমাদের উচিত শ্রমিকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা। তাহলেই প্রকৃত অর্থে এই দিবসের সম্মান রক্ষা পাবে।